আইফোন। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্মার্টফোন। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি আর নান্দনিক ডিজাইনের জন্য বিখ্যাত। কিন্তু একটা আইফোন তৈরিতে খরচই বা কত আর কোম্পানি কত টাকা লাভ করে তা কী জানেন? জানলে কিন্তু চোখ কপালে উঠবে।
বর্তমানে একটি আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্স তৈরিতে আনুমানিক খরচ পড়ে ৪৮৫ ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫৭ টাকার বেশি। আর এটি বাজারে বিক্রি করা হয় ১১৯৯ ডলার বা এক লাখ ৩৪ হাজার বেশি। অর্থাৎ, একটি আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্স থেকে অ্যাপল আনুমানিক ৭০০ ডলার লাভ করে। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮০ হাজার টাকার বেশি। আপনি যখন একটি আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্স কিনছেন তখন পণ্যের উৎপাদনের দামের চেয়ে ৮০ হাজারের বেশি টাকা অ্যাপলের হাতে তুলে দিচ্ছেন। সেটা কীভাবে ঘটছে?
উন্নত প্রযুক্তি
আইফনের প্রতিটি ইউনিটে ব্যবহার করা হয় উন্নত ডিসপ্লে, ক্যামেরা, প্রসেসর ও মেমোরি। প্রথমত এগুলো ফোনের উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দেয়। যেমন- আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্সের ডিসপ্লে ও ক্যামেরার খরচ হয় সবচেয়ে বেশি। যা পুরো ফোন নির্মাণের প্রয় ১৬ শতাংশ। এছাড়া এ১৮ চিপসেটের মতো উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন প্রসেসর ব্যবহারের ফলে খরচ আরও বেড়ে যায়।
আর অ্যান্ড ডি
এটা তো গেল দৃশ্যমান ব্যয়। ফোনের দাম অধিক হওয়ার পেছনে রয়েছে কিছু অদৃশ্য ব্যয়। যা ব্যবহারকারীদের কোনো কাজে আসে না। তারপরও সেই মূল্য তাকেই প্রদান করতে হয়। সেগুলো হলো- রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্থাৎ গবেষণা ও উন্নয়ন। আমরা অ্যাপেলের যে পণ্য ব্যবহার করি তা কিন্তু এমনি এমনি তৈরি হয় না। এর পেছনে গবেষণা ও মান উন্নয়নের জন্য একাধিক গবেষক দল কাজ করে। ডিসপ্লের কথাই ধরা যাক। অ্যাপেল ২০০৭ সালে তাদের ফোনে এলইডি ডিসপ্লে ব্যবহার করেছিল। বর্তমানে তারা লো টেম্পারেচার পলি ক্রিস্টালিন অক্সাইড (এলটিপিও) ডিসপ্লে ব্যবহার করছে। এই প্রোডাক্টের গুণগত মান উন্নয়ন, তার জন্য কিন্তু অ্যাপলকে অর্থলগ্নি করতে হয়েছে। আর ব্যবহারকারী হিসেবে সেই অর্থের একটি অংশ বহন করতে হচ্ছে আপনাকেই।
ব্র্যান্ড ভ্যালু
প্রতিটি কোম্পানিরই বাজারে নিজেদের একটি ব্রান্ড ভ্যালু থাকে। এই ভ্যালুই হচ্ছে সেই কোম্পানির সুনাম। এই সুনামের একটি আর্থিক মূল্যমান থাকে যার একটি অংশ ফোন কেনার সাথে আপনার পকেট থেকে আপনি নিজেই কোম্পানিকে প্রদান করে থাকেন।
মার্কেটিং
আইফোনের মার্কেটিংয়ে অ্যাপেল অনেক টাকা ব্যয় করে। সঠিক অংক প্রকাশ না করলেও বিশেষজ্ঞদের সমীকরণ বলে, আইফোন তাদের ১৬ সিরিজের মার্কেটিংয়ে কয়েকশ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করছে। আর সেই মার্কেটিংয়ের ব্যয় তারা কোথা থেকে নেবে সেটা কী আর লেখার প্রয়োজন আছে? ঠিক ধরেছেন আপনার পকেট থেকে।
উৎপাদন ও সরবরাহ চেইন
অ্যাপেলের প্রোডাক্ট কিন্তু শুধু আমেরিকায় তৈরি হয় না। বরং ধাপে ধাপে কয়েকটি দেশে তৈরি হয়। এখানে উৎপাদন থেকে সরবরাহ পর্যন্ত তাদের একটি চেইন বা ধারাবাহিকতা মেনে চলতে হয়। অ্যাপেল তাদের পণ্য নিজস্ব স্টোর ছাড়া বিক্রি করে না। সুতরাং স্টোর খরচ, সেলসম্যান, বেতনসহ নানাবিধ ব্যয় যুক্ত হয় প্রতিটি ইউনিটের সাথে। আর অ্যাপেল নিজ কোম্পানির জন্য পরোক্ষভাবে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে সে ব্যয় বহন করে। তাই অ্যাপলের ফোনের মূল্য এত বেশি।
কম দামে বিক্রি করলে অ্যাপলের ক্ষতি কী?
বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান টিডি ক্রাউনের তথ্য অনুযায়ী, আইফোনের উৎপাদন মূল্যের চেয়ে তার আনুষঙ্গিক ব্যয় অনেক বেশি। তবে অ্যাপেল যদি তাদের পণ্যের জন্য এই ব্যয় না করে তাহলে তাদের ব্রান্ড ভ্যালু কমে যাবে। যার প্রভাব সরাসরি পরবে তাদের পণ্যে। বাজারে তাদের পণ্য, চাহিদা হারাবে। ফলে আয় ও মুনাফা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে। তাই অ্যাপেল পণ্য ও সেবার মান ধরে রাখতে পারবে না। এবার ভেবে দেখুন আপনি কি মানহীন পণ্য কিনবেন?
অ্যাপেল যদি আরঅ্যান্ডডি বাদ দিয়ে পণ্যের দাম কমাতে চায়, তাহলে আপনি উন্নত ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তি হাতে পাবেন না। যদি বিজ্ঞাপন এবং প্রচার-প্রচারণা বাদ দেয় তাহলে তাদের কোন পণ্যটি বাজারে নতুন এলো সেটার ফিচার কি, কেন সে প্রোডাক্টটি কেনা উচিত তার কিছুই আপনি জানতে পারবেন না। আর যে পণ্য সম্পর্কে ক্রেতার ধারণা কম সে পণ্যের চাহিদাও কম।
আবার ধরুন অ্যাপেল তাদের ব্রান্ড ভ্যালু কমিয়ে দিল। তাহলে ভাবুন একটা ব্রান্ড ভ্যালুহীন প্রোডাক্ট আপনাকে কি প্রিমিয়াম ফিল দিতে পারবে? আপনি কি সেটা কিনবেন। উত্তর সহজ, ‘না’।
আসলে অ্যাপল লাভাররা জানে তারা যে ফোনটি ব্যবহার করছে সেটি শুধু একটা ফোন না, তারচেয়ে অনেক বেশি কিছু। আইফোনের তুলনা শুধুই আইফোন
তথ্যসূত্র : ফোনঅ্যারেনা ও অ্যাপলইনসাইডার
এমএন/ওএফ