ভারতে শেখ হাসিনার ১০০ দিন : কীভাবে রয়েছেন এবং সামনে কী?
বাংলাদেশের ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৯
শেখ হাসিনা। ছবি : সংগৃহীত
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট, ২০২৪ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। তারপর থেকে ভারতেই আত্মগোপনে আছেন তিনি। ইতোমধ্যে ভারতে শেখ হাসিনার অবস্থান এবং নিরাপত্তা প্রোটোকল নিয়ে গত ১০০ দিনে অনেক প্রশ্ন উঠেছে।
বুধবার (১২ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলা।
শুরুতে দিল্লির গাজিয়াবাদে একটি বিমানঘাঁটিতে তাকে রাখা হয়েছিল। কিন্তু পরে তাকে সুরক্ষিত গোপন জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়। বর্তমানে ভারতীয় নিরাপত্তার ঘেরাটোপে আছেন তিনি। তার নিরাপত্তার সম্পূর্ণ দায়িত্বই এখন ভারতের হাতে।
ভারত সরকার তার জন্য কঠোর নিরাপত্তা প্রোটোকল গ্রহণ করেছে, যা সাধারণ ভিভিআইপি নিরাপত্তা থেকে আলাদা। বিশেষভাবে গোপনীয়তা রক্ষার পাশাপাশি শেখ হাসিনাকে সর্বাধিক নিরাপত্তা দিতে সাদা পোশাকের নিরাপত্তাকর্মীরা তার চারপাশেই থাকছেন।
‘গোপনীয়তাই হলো নিরাপত্তা’,-এভাবেই ভারত সরকারের কর্মকর্তারা তার নিরাপত্তা ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করেছেন। তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সীমিত এবং ভারতে কোনও প্রকাশ্য রাজনৈতিক বিবৃতি দেয়ার অনুমতি নেই তার।
ভারতের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা নিশ্চিত, শেখ হাসিনার নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তা সুরক্ষিত রাখতে সমস্ত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। রাজনৈতিক পুনর্বাসন এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত এখনও নেওয়া হয়নি, তবে ভারতের সতর্ক অবস্থান স্পষ্ট।
শেখ হাসিনা ভারতের মাটিতে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে পারবেন না, ভারত সরকার তাকে এ বিষয়ে সতর্ক করেছে। যদিও তার দলের নেতাদের সঙ্গে ফোনালাপ এবং কিছু অডিও রেকর্ড প্রকাশ পেয়েছে, তবে ভারত সরকার এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করেনি।
তবে এ সম্পর্কে দিল্লির নর্থ ব্লকের একজন কর্মকর্তা বলছেন, ‘আমি জানি না এটা এআই দিয়ে বানানো হয়েছে না কি শেখ হাসিনার নিজেরই গলা- তবে তার তো পরিচিতদের সঙ্গে কথাবার্তা বলায় কোনও বিধিনিষেধ নেই, এখন কেউ যদি সেই আলাপ রেকর্ড করে লিক করে দেয়, তাতে আমাদের কী করার আছে?’
ভারতের কিছু পর্যবেক্ষক মনে করছেন, শেখ হাসিনা দলের নেতাকর্মীদের মনোবল ধরে রাখতে এই অডিওগুলোর মাধ্যমে যোগাযোগ করেছেন এবং ভারতের পক্ষ থেকে এগুলো ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
এর আসল কারণটা যা-ই হোক, বাস্তবতা হলো শেখ হাসিনা ভারতে কোনও গৃহবন্দিও নন বা রাজনৈতিক বন্দিও নন- ফলে দেশে-বিদেশে তার পরিচিতদের সঙ্গে কথাবার্তা বলার সুযোগ তিনি পাচ্ছেন। নিউজ চ্যানেল, খবরের কাগজ বা ইন্টারনেটেও তার সম্পূর্ণ অ্যাকসেস আছে।
তবে ৫ই আগস্টের পর থেকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের যে নেতাকর্মীরা পালিয়ে ভারতে চলে এসেছেন তাদের কারও কারও সঙ্গে শেখ হাসিনার যোগাযোগ হলেও এরা কেউই সশরীরে দলনেত্রীর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাননি।
কিন্তু বাংলাদেশে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক পুনর্বাসন কি আদৌ সম্ভব এই অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়টা নিয়ে ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে একটি কথাও বলছে না সঙ্গত কারণেই। তবে ঢাকায় ভারতের সাবেক হাই কমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী মনে করেন, এই কাজটা শুধু কঠিন নয়-খুবই কঠিন!
সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলাকে তিনি জানান, ‘এখনও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সে দেশে ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলছে, তাদের দলীয় সংগঠনও ছত্রভঙ্গ! শেখ হাসিনার বয়স আজকের চেয়ে দশটা বছর কম হলে তবু হয়তো মনে করা যেত তিনি দেশে ফিরে দলের হাল ধরবেন- কিন্তু এই মুহূর্তে সেটা প্রায় অসম্ভব বলেই মনে হচ্ছে।’
কিছুদিন আগে ফাঁস হওয়া একটি অডিওতে শেখ হাসিনার মতো কণ্ঠস্বরে একজনকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘আমি (বাংলাদেশের) খুব কাছাকাছিই আছি, যাতে চট করে ঢুকে পড়তে পারি!’
গত সপ্তাহে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হওয়ার পর আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মীও হয়তো ভাবছেন, তাদের নেত্রীর দেশে ফেরা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা!
তবে ভারত কিন্তু এখনই অতটা আগ বাড়িয়ে ভাবতে রাজি নয়! সাউথ ব্লকের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা জানায়, ‘পিচ এখনও প্রতিকূল, বল উল্টোপাল্টা লাফাচ্ছে। এরকম সময় চালিয়ে খেলতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে!’
ক্রিকেটের উপমা দিয়ে তিনি আরও বলেন, এখন বরং ধৈর্য দেখানোর সময়, ফলে প্রতিপক্ষের লুজ বলের জন্য অপেক্ষা করাটাই শ্রেয়।’
রাজনীতির উইকেটে পোড় খাওয়া ব্যাটার শেখ হাসিনাও নিশ্চয় এটা জানেন এবং সেই অনুযায়ী উপযুক্ত সুযোগ এলে তবেই সেটা কাজে লাগাবেন– একশো দিনের মাথায় ভারতও আপাতত এটুকুতেই তাদের ভাবনা সীমিত রাখছে!
এসবি