ইমাম ইবনে আসাকিরকে জান্নাতে বিয়ের আকাঙ্ক্ষা এই মহীয়সীর
বেলায়েত হুসাইন
প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১৬:১৪
মাত্র ৫ বছর বয়সেই বাবাকে হারান। উত্তরাধিকার সূত্রে উল্লেখ করার মতো কোনো স্থাবর কিংবা অস্থাবর সম্পদ পাননি। এমন দারিদ্রতার মধ্যেই শুরু হয় জীবনযুদ্ধ। কিন্তু সে যুদ্ধে হেরে যাননি এতিম বালিকাটি। ইলমি পরিবারে জন্ম হওয়ায় শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তার মধ্যে ইলমচর্চার মেজাজ ছিল পূর্ণ মাত্রায় এবং একপর্যায়ে ইতিহাস, আরবি সাহিত্য ও ইলমি গবেষণায় হয়ে ওঠেন গোটা আরব জাহানের অনন্যা এক নারী। জন্মস্থানের দিকে ইঙ্গিত করে অনেকে তাকে সম্মোধন করতেন ‘আলেপ্পোর আলো’ নামে। তিনি হলেন শাইখাহ সাকিনা আশ-শিহাবি।
মহীয়সী এই নারী ১৩৫২ হিজরিতে আলেপ্পোর আল-বাব শহরে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে মাদ্রাসায় যাওয়ার সুযোগ পাননি। তবে শিক্ষার প্রতি ছিল তার প্রবল আগ্রহ। এ কারণে বাড়িতেই ভাইদের সাহায্যে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত শিখেন। পরে ধীরে ধীরে আয়ত্ম করেন লেখা-পড়ার দক্ষতাও। এ সময়টিতে শাইখাহ সাকিনা ও তার ছোট বোন পত্র-পত্রিকা, ম্যাগাজিন ইত্যাদি পড়া শুরু করেন। এতে পরিবারের নিকট দুজনের মধ্যে বিশেষ প্রতিভা দৃষ্টিগোচর হয় এবং তারা দু’বোনকে উন্মুক্তভাবে প্রাথমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষা দিতে উৎসাহ দেয়। শিক্ষাজীবনের পরের ধাপগুলোতে তাদের আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি এবং একপর্যায়ে ১৯৬২ সালে দামেশেক ইউনিভার্সিটি থেকে দুই বোন আরবি ভাষা বিভাগে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
পড়াশোনা শেষে তার কর্মজীবন শুরু হয় সিরিয়ার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি আরবি ভাষা শিক্ষাদান বিভাগে। এখানে প্রায় ১০ বছর আরবি সাহিত্যের ওপর কাজ করেন। এরপর সর্বপ্রথম নারী হিসেব আলেপ্পোর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষিকা নিযুক্ত হন। ১৯৬৬ সালে এখান থেকে তিনি ফিরে আসেন দামেশকে। এখানেও আরবি সাহিত্য ও ইসলামি ইতিহাসসহ নানা বিষয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। পাশাপাশি রচনা করেন সাহিত্য, ইতিহাস ও সমালোচনামূলক অসংখ্য প্রবন্ধ-নিবন্ধ। এ সময় থেকেই চতুর্দিকে তার সুপরিচিতি বাড়তে থাকে। তবে তিনি আজও ইলম অন্বেষণকারী ও ইতিহাস চর্চাকারীদের নিকট চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন ইতিহাসের অমর গ্রন্থ ‘তারিখে দিমাশক’ তাহকীক করে।
‘তারিখে দিমাশক’ এমন একটি কিতাব, যা ইসলামি ইতিহাসের সর্ববৃহৎ ও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎস গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত। ৮০ খণ্ডের বিশালাকার এ কিতাবের অন্তত ৪০টি খণ্ডের তাহকীক তথা ব্যাখ্যা করেছেন শাইখাহ সাকিনা আশ-শিহাবি (রহ.)। গ্রন্থটি তাহকীকের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়, যেখানের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন এই মহীয়সী নারী। তিনি তারিখে দিমাশকের লেখক ইমাম ইবনে আসাকিরের বর্ণনা, দৃষ্টিভঙ্গি ও সনদ উল্লেখের ধরন ইত্যাদির প্রতি বিমুগ্ধ হন।
তিনি কিতাবটির প্রতি এতটাই আকৃষ্ট হয়ে পড়েছিলেন যে, দিনে অফিসে এবং রাতে বাড়িতে বসে তাহকীকের কাজ করতেন। শাইখাহ সাকিনা ইলম অর্জনে মগ্ন হওয়ার কারণে সমর্থ বয়সে বিয়ে করতে পারেননি। কিন্তু শেষ বয়সে ঠিকই বিয়ের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেন চিরকুমারী এ মহীয়সী। তবে সেটা দুনিয়াতে নয়; জান্নাতে।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন যে, তারিখে দিমাশক তাহকীক করতে গিয়ে তিনি লেখক ইমাম ইবনে আসাকিরের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছেন এবং জান্নাতে তাকে স্বামী হিসেবে পেতে চান। ১৪২৭ হিজরিতে ইন্তেকাল করা এই গুণবতী নারীর জীবন ও ইলমের প্রতি নিবেদন আজও আমাদের অনুপ্রেরণা দেয়। আল্লাহ জান্নাতে তাঁকে সুউচ্চ মর্যাদা দান করেন। আমীন
বিএইচ/