জলবায়ু সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার সামগ্রিক ক্ষতি নিয়ে বলবেন ড. ইউনূস
বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৪, ২১:০৪
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মঙ্গলবার আজারবাইজানের বাকুতে COP29-এ হাই লেভেল ক্লাইমেট ক্লাব লিডারস মিটিং-এ বক্তৃতা দেন। ছবি : সংগৃহীত
জাতিসংঘের আয়োজনে জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারত, নেপাল ভুটানসহ গ্লোবাল সাউথের (দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার) ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর অবস্থান তুলে ধরবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পূর্ব ইউরোপের দেশ আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের ২৯তম আসরের তৃতীয় দিনে বুধবার (১৩ নভেম্বর) বিশ্ব নেতাদের সামনে এসব দাবি তুলে ধরবেন তিনি। বুধবার জলবায়ু সম্মেলনের মূল সম্মেলনে তাঁর বক্তব্য দেওয়ার কথা রয়েছে।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) এ তথ্য জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
সম্মেলনে অংশ নিয়ে ইতোমধ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। এসব বৈঠকে বাংলাদেশের জলবায়ু ক্ষতির নানান বিষয় তুলে ধরেছেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব বলেন, বাংলাদেশ মারাত্মক জলবায়ু ঝুঁকিতে রয়েছে। আমাদের জীবনযাপনকে দুর্বিষহ করে তুলছে, অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এজন্য ক্ষতিপূরণে আমাদের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, চলতি বছরে ৬টি বড় বন্যা হয়েছে। আমরা গত ৪০ বছরে কুমিল্লা, নোয়াখালী, ফেনী এবং লক্ষ্মীপুরসহ এ জায়গায় এসব কোনোদিন বন্যার কথা শুনিনি। এমন অনেক জলবায়ু ঝুঁকি আসছে যেগুলোর চিন্তাও আমাদের ছিল না। এবার এপ্রিলে পুরো মাস জুড়ে আমাদের দেশে হিট ওয়েভ হয়েছে।
জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশ বাংলাদেশের ক্ষতির বিষয়গুলো তুলে ধরার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। বাংলাদেশের কার্বন ফুটপ্রিন্ট খুবই নগণ্য। কপ সম্মেলনে অংশ নেওয়া বাংলাদেশের ২৯টি সোসাইটি, এনজিওর অফিশিয়াল ও জলবায়ু নিয়ে কাজ করেন এমন অনেক সাংবাদিক জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। দেশের বিভিন্ন প্রতিনিধিদের বাংলাদেশের ভয়াবহ জলবায়ু ক্ষতির চিত্র গ্লোবাল ফোরামে তুলে ধরার অনুরোধ করেন প্রধান উপদেষ্টার এই প্রেস সচিব।
ভিক্ষা নয়, দায়ী দেশগুলোর কাছ থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিপূরণ চাওয়া হবে বলে জানান তিনি। বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন দেশ থেকে পাওয়া ৩ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার, ঋণ হিসেবে পাওয়া ২৫৮ মিলিয়ন ডলার ক্ষতির তুলনায় অপ্রতুল। জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের ফলে গ্লোবাল নর্থে যে সভ্যতা গড়ে তোলা হয়েছে তার শিকার বাংলাদেশসহ গ্লোবাল সাউথের দেশগুলো।
জলবায়ুর প্রতিবেদনগুলোতে বাংলাদেশের ক্ষতির যে চিত্র উঠে এসেছে তাতে দেখা যায়, প্রতি বছর বাংলাদেশে জলবায়ু সংক্রান্ত ক্ষতি হচ্ছে ১২ বিলিয়ন ডলার, ক্ষতিপূরণ হিসেবে আসছে তিন বিলিয়ন ডলার। আরও অন্তত সাড়ে ৮ বিলিয়ন ডলারের মতো ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ও বাংলাদেশের সব বিষয় উঠে আসব উপদেষ্টার বক্তব্যে।
২০ দেশের শীর্ষ নেতার সঙ্গে ড. ইউনূসের সাক্ষাৎ :
আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে কপ ২৯ বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন শীর্ষ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে ব্যস্ত সময় পার করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। সফরের দ্বিতীয় দিনে তিনি বিশ্বের অন্তত ২০টি দেশের শীর্ষ নেতা এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানদের সাথে দেখা করেছেন।
কপ ২৯ সম্মেলনে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান এবং তুর্কি ফার্স্ট লেডির সঙ্গে দেখা করেছেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার প্রেসিডেন্ট ডেনিস বেসিরোভিচ, সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান, ইরানের ভাইস প্রেসিডেন্ট শিনা আনসারি, ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো, ব্রাজিলের পরিবেশ মন্ত্রী মেরিনা সিলভা, আলবেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী এডি রামা, মন্টিনিগ্রো প্রেসিডেন্ট জ্যাকভ মিলাতোভিচ, বার্বাডোসের প্রধানমন্ত্রী মিয়া মটলি, ঘানার প্রেসিডেন্ট নানা আকুফো-আডোর ও জার্মানী এবং চিলির শীর্ষ নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা।
এমএইচএস