সংবিধানে গণভোটের বিধান চান অ্যাটর্নি জেনারেল
আদালত প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১:২০
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। ছবি : সংগৃহীত
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কেন অবৈধ হবে না, এ মর্মে জারি করা রুলের শুনানিতে গণভোটের বিধান বহাল করতে হাইকোর্টের কাছে আবেদন জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
রাষ্ট্রের প্রধান এ আইন কর্মকর্তা বলেন, সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে গণভোটের বিধান ছিল। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এ বিধান তুলে দেওয়া হয়েছিল। নিশিরাতে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে যারা জাতীয় সংসদ সদস্য হয়েছিলেন, তাদের ভোটে এ বিধান বাতিল করা হয়। এ বিধানটি বহাল চাই।
বুধবার (১৩ নভেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এসব বক্তব্য তুলে ধরেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
শুনানিতে তিনি বলেন, সংবিধানের ৭(খ) অনুচ্ছেদের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। সংবিধানের মূলনীতি গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র নয়। আমরা সমাজতন্ত্র বাদ চাচ্ছি। শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানকে কেউ অস্বীকার করে না। জাতির পিতা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক আছে। জাতি বিভক্ত। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তৈরি করা সংবিধানে জাতির পিতা ছিল না। এটি পঞ্চদশ সংশোধনীতে ঢোকানো হয়েছে। জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমন করা হয়েছে—তার বিরুদ্ধে কথা বললেই রাষ্ট্রদ্রোহ হবে। তাকে জাতির পিতা বলা সংবিধানের চেতনার পরিপন্থি।
তিনি বলেন, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬ বাতিল চাচ্ছি। এর মাধ্যমে গণমানুষের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করা হয়েছে। বিশ্বের কোনো দেশে ভাষা দিয়ে জাতিসত্তা নির্ধারণ করা হয় না।
অনুচ্ছেদ ৭ (ক) ও ৭ (খ) বিষয়ে তিনি বলেন, এটা গণতন্ত্রকে নস্যাৎ তথা ধ্বংসের জন্য করা হয়েছে। স্বৈরশাসনকে দীর্ঘায়িত করার জন্য অসৎ উদ্দেশ্যে এটি করা হয়েছে যা আইনের শাসনের পরিপন্থি।
অনুচ্ছেদ ৮-এর বিষয়ে বলেন, ধর্মনিরপেক্ষ শব্দটা রাখার দরকার নেই। দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ মুসলমান। আগে আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাসের কথা ছিল। আগে যেভাবে ছিল, এখন সেভাবে চাচ্ছি। কেননা ২ (ক)-তেই বলা আছে, সব ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমান অধিকার ও সমমর্যাদা নিশ্চিত করবে। অনুচ্ছেদ ৯-তে বাঙালি জাতীয়তাবাদের কথা বলা হয়েছে যা সাংঘর্ষিক।
শুনানিতে তিনি আরও বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলে বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। মৌলিক অধিকার ধ্বংস করা হয়েছে।
পঞ্চদশ সংশোধনী কেনো অসাংবিধানিক হবে না এ প্রশ্নে বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীতে রাখা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ‘৯০-এর গণঅভ্যুত্থান ও ‘২৪-এর জুলাই বিপ্লবের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এটি বাতিল না হলে আবু সাঈদ, মুগ্ধসহ শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে না।
প্রসঙ্গত, গত ১৯ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কেন অবৈধ হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে হাইকোর্ট।
সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে এ রুল জারি করা হয়।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির জনক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এই সংশোধনীর দ্বারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। এছাড়া, জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা ৪৫ এর স্থলে ৫০ করা হয়।
এমএজে/এমএইচএস