৩১ অক্টোবর, রাত নামলেই বিশ্বজুড়ে শুরু হয় এক ভয় আর আনন্দের মিশ্রণ। এই দিনটি হ্যালোইন নামে পরিচিত। বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ, সৌদি আরব, ইন্দোনেশিয়াসহ কিছু মুসলিম দেশে পালিত হচ্ছে এই পশ্চিমা উৎসবটি। হ্যালোইন বিশ্বের বহু মানুষের জন্য একটি জনপ্রিয় সামাজিক উৎসব হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। তবে এটি কি শুধুমাত্র একটি সাংস্কৃতিক উৎসব? এমন উৎসব পালনে ইসলাম কী বলছে তা জানা যাক। প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক এর প্রকৃত ইতিহাস।
প্রায় ২০০০ বছর আগে বর্তমান আয়ারল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও উত্তর ফ্রান্সে বসবাস করতো কেল্টিক জাতি। কেল্টিক সামহেইন উৎসব ছিল শীতের শুরু ও ফসল সংগ্রহের শেষ দিন। তাদের ধারণা ছিল, অক্টোবরের শেষ দিনের রাত সবচেয়ে খারাপ। তারা মনে করত ওই রাতে সব প্রেতাত্মা ও অতৃপ্ত আত্মারা পৃথিবীতে ঘুরে বেড়ায়। এমনকি তারা মানুষের ক্ষতি করতে পারে। আর তাই কেল্টিক জাতির সদস্যরা এই রাতে বিভিন্ন ধরনের ভূতের মুখোশ ও কাপড় পড়ে নির্ঘুম রাত কাটাতেন।
আইরিশ ও স্কটিশ লোকসাহিত্যে হ্যালোইনকে বলা হয়েছে, সুপারন্যাচারাল এনকাউন্টারস হিসেবে। আইরিশ মিথে ‘স্টিংজি জ্যাক’ নামে এক চরিত্র শয়তানকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য পরিচিত ছিল। তার স্মরণে মানুষ কুমড়ার মধ্যে মুখ খোদাই করে এক বিশেষ প্রদীপ জ্বালাতো। এছাড়াও, ভূত-জাদুকরীর পোশাক পরা, ট্রিক-অর-ট্রিট এর মতো ঐতিহ্য রয়েছে এই উৎসবকে ঘিরে।
বর্তমানে হ্যালোইন ঐতিহ্য নয়, উৎসবে পরিণত হয়েছে। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্করাও অংশ নেয় পোশাকের কনটেস্টে। কেউ কেউ আবার যায় হান্টেড হাউজ বা ভুতুড়ে স্থানে। বিশ্বজুড়ে হ্যালোইন উপলক্ষে বাড়ি ও রাস্তা সজ্জিত হয় নানা ভৌতিক থিমে, বিশেষ করে উত্তর আমেরিকায়, যেখানে হ্যালোইন ক্রিসমাসের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বাণিজ্যিক উৎসব। বেশ কিছুদিন আগে সৌদি আরবে বেশ ধুমধাম করেই হ্যালোইন উৎসব পালন করা হয়েছে। উৎসবে অংশগ্রহণকারীদের অনেককেই বিচিত্র সব সাজে দেখা গেছে।
তবে হ্যালোইন পালন ইসলামে হারাম। ইসলামের মূল ভিত্তিই হচ্ছে এক সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করা। আর তাই মৃত্যুর দেবতার জন্য যে উৎসব, সে উৎসবে মুসলিমরা অংশগ্রহণ করতে পারে না । এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“যে ব্যক্তি অন্য সম্প্রদায়ের (বিধর্মীদের) সাদৃশ্য অবলম্বন করে সে তাদেরই দলভুক্ত।” [সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৪০৩১, সহীহুল জামে-আলবানি, হা/২৮৩১]
মানুষ আল্লাহর সুন্দরতম সৃষ্টি। কিন্তু এই কথিত উৎসবে মানুষ বীভৎস মুখোশ ও ভীতিকর পোশাক-পরিচ্ছদে সেজে আল্লাহর সৃষ্টিকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে থাকে। তাই আমাদের উৎসব পালেনে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।
টিএ/ওএফ