মার্কিন নির্বাচন
কাকে ভোট দেবেন বাংলাদেশি অভিবাসীরা
নিউইয়র্ক প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৩:৪৪
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন (৫ নভেম্বর) আজ। রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। বাংলাদেশি নির্বাচনি স্টাইলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। অন্যান্য বছরের মতো এবারও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশিরা ঘরে বসে নেই।
যারা সরাসরি মূলধারার রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত তারা প্রকাশ্যেই মাঠে নেমে কেউ কমলা আবার কেউ ট্রাম্পের জন্য প্রকাশ্যেই নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে কমলা ও ট্রাম্প সমর্থকদের নির্বাচনী সভা ও ব্যানারযুক্ত গাড়ি প্রদর্শনও করেছে প্রবাসীরা।
প্রবাসীরা কাকে ভোট দেবেন এতদিন তা গোপনেই ছিল। কিন্তু বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত হচ্ছে এমন দাবি করে গত বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) এক্সে (সাবেক টুইটার) একটি পোস্ট করেন। বাংলাদেশের কড়া সমালোচনা করে ট্রাম্প লেখেন- বাংলাদেশে হিন্দু, খ্রিষ্টান ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার কড়া নিন্দা জানাচ্ছি। তারা উচ্ছৃঙ্খল জনতার দ্বারা হামলা ও লুটের শিকার হচ্ছেন। বাংলাদেশ এখন পুরোপুরি বিশৃঙ্খল অবস্থায় রয়েছে।
এ মন্তব্যের পর প্রবাসের আওয়ামীপন্থীরা প্রকাশ্যেই ট্রাম্পকে সমর্থন জানিয়েছেন। তারা মনে করছেন, ট্রাম্প ক্ষমতার এলে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার বেকায়দায় পড়বে। অপরদিকে বিএনপিপন্থী বেশিরভাগ প্রবাসী কমলা হ্যারিসকে সমর্থন জানিয়েছেন।
২০০০ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে বসবাস করছেন ২ লাখ ৭৭ হাজার অভিবাসী। যা আমেরিকার মোট জনসংখ্যার প্রায় ০.৫ শতাংশ। অবৈধ অভিবাসীদের বাদ দিলেও গত ১৪ বছরে বৈধ অভিবাসীদের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় দেড় গুণ। এছাড়াও প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক অবৈধ অভিবাসী রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে।
গত নির্বাচনে আমেরিকায় বসবাসরত অন্যান্য অভিবাসীদের বাংলাদেশিরা সর্বাধিক ৫৫ শতাংশ ভোট দিয়েছেন। সমীক্ষা অনুসারে, ৯০ শতাংশ বাংলাদেশি-আমেরিকান ভোটার এবারের নির্বাচনে ভোট দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন।
বিগত নির্বাচনে দেখা গেছে, অভিবাসী সমাজের জন্য যেসব প্রার্থী ইতিবাচক নীতি প্রয়োগ করেছেন, তারাই আমেরিকান-বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের সমর্থন পেয়েছেন। এবারে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের অভিবাসন নীতি কেমন, তাদের অর্থনৈতিক পরিকল্পনাগুলো আমেরিকান-বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের জন্য সহায়ক কিনা, তা মূল্যায়ন করা জরুরি। এছাড়াও, বাংলাদেশের সঙ্গে মার্কিন সম্পর্কের উন্নতি ঘটানোর বিষয়ে প্রার্থীরা কী পরিকল্পনা করেছেন, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ।
এ বিষয়ে বিশ্বখ্যাত ইয়েলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি অধ্যাপক ও বিজ্ঞানী ড. গোলাম চৌধুরী ইকবাল বলেন, একজন বাংলাদেশি হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে মত প্রকাশের সময় উভয় প্রার্থীর ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলো বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ। কিছু মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের আচরণে 'প্যাথলজিক্যাল নার্সিসিজম' বা বিপদজনক ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্টের লক্ষণ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সমালোচনা সহ্য করতে না পারা, নিজের দোষ স্বীকারে অক্ষমতা ও ব্যক্তিগত প্রয়োজনে জনকল্যাণকে উপেক্ষা করে। এ ধরনের নেতৃত্বের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে, যা জনস্বার্থের পরিপন্থী। ট্রাম্প শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, গোটা বিশ্বের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারেন বলে মনে করেন ড. গোলাম চৌধুরী ইকবাল।
রাজনীতিবিদ ও নিউ ইয়র্ক প্রবাসী ব্যবসায়ী আক্তার হোসেন বাদল বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের নতুন রাষ্ট্রপতি চাই যিনি ভালো অর্থনৈতিক সাহায্য করতে পারেন। যিনি আমাদের আমেরিকান সীমান্তকে নিরাপদ করতে পারেন। এছাড়াও সারা বিশ্বে ভালো ফরেনপলিসি ও গণতন্ত্র দরকার।
আক্তার হোসেনের মতে, ডোনাল্ড ট্রাম্পই সঠিক ব্যক্তি যিনি আমেরিকাকে মহান করে তুলবেন। তাই তিনি ট্রাম্পকেই ভোট দেবেন। পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হবেন ট্রাম্প, মন্তব্য করেন বাদল।
নিউইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট নাসির খান পল বলেন, একজন আমেরিকান-বাংলাদেশি মুসলমান এবং সাধারণ নাগরিক হয়ে যদি সবকিছু বিবেচনা করি তবে অবশ্যই ট্রাম্পকে ভোট দেব। কারণ আমরা যুদ্ধ চাই না, ৬০ হাজার নিরীহ মুসলমান এই কমলা ও বাইডেন অলরেডি মেরে ফেলেছে। তাদের হাত মুসলমানের রক্তে ভরা। মুসলমান হয়ে তাদের ভোট দিলে শহীদের রক্তের সাথে বেঈমানি হবে। তাই এবার প্রচুর বাংলাদেশি-আমেরিকান ট্রাম্পকেই ভোট দেবেন।
আমেরিকান-বাংলাদেশি চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির চেয়ারম্যান বলেন, ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আর ২০২৪ সালের নির্বাচনে কিছু পার্থক্য আছে। গতবার আমি রিপাবলিকন হওয়া সত্ত্বেও ট্রাম্পকে ভোট দেইনি। এবার গাজা নীতি, লেবানন ইস্যুতে দুই পার্টির কোনো পার্থক্য নেই। কিন্তু এই দুটি ইস্যুর কারণে কমলা হ্যারিস বেশ কিছু মুসলিম ভোট হারাবেন। এমন কি নতুন এবং তরুণ ভোটারদেরও। এর মধ্যে কিছু তরুণ-তরুণী ভোট দেওয়া থেকেই বিরত থাকবে বলে জানিয়েছেন।
তবে, শেষ পর্যন্ত কে জিতবে, তা ভবিষ্যদ্বাণী করা খুব কঠিন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে যেই জিতুন না কেন, সামগ্রিকভাবে আমেরিকান রাজনৈতিক ভূখণ্ডে বাংলাদেশি ভোটারদের প্রভাব অবশ্যই বাড়ছে। আগামী বছরগুলোতেও বাংলাদেশি ভোটারদের উপেক্ষা করা উভয়পক্ষের জন্যই কঠিন হবে।
মার্কিন নির্বাচনে লড়ছেন বাংলাদেশি ৬ বংশোদ্ভুত
মার্কিন নির্বাচনে এবারও লড়ছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ৬ প্রার্থী। নতুন কোনো প্রার্থীর খবর পাওয়া যায়নি। আগে থেকেই যেসব নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছেন স্টেটের বিভিন্ন আইনসভায় এবার তারাই পুননির্বাচনের জন্য দাঁড়িয়েছেন।
এদের মধ্যে সবচেয়ে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন জর্জিয়া স্টেট সিনেটর শেখ এম. রহমান, একই স্টেটের অপর ডিস্ট্রিক্ট থেকে নির্বাচিত সিনেটর নাবিলা ইসলাম, কানেকটিকাট স্টেট সিনেটর মাসুদুর রহমান, ভার্জিনিয়া স্টেট সিনেটর সাদ্দাম সেলিম এবং নিউ হ্যাম্পশায়ার স্টেট রিপ্রেজেনটেটিভ আবুল খান।
নিউজার্সি প্লেইন্স বরো টাউনশিপ থেকে নির্বাচিত কাউন্সিলম্যান ড. নুরুন নবী টানা ১৪ বছর ধরে এই পদে আছেন। এবার জিতলে এটা হবে তার পঞ্চম মেয়াদ। তার টাউনশিপে একজন মেয়র ও ৫ জন কাউন্সিলম্যান রয়েছেন। তিনি কাউন্সিলম্যান হিসেবে কালচারাল ও হেরিটেজ বিষয়ের দায়িত্বে রয়েছেন।
নির্বাচনে বাংলাতেও ব্যালট দেখবে নিউইয়র্ক প্রবাসীরা
এবারের নির্বাচনে বাংলায় ব্যালট পেপার দেখবে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের প্রবাসীরা। ব্যালটে বাংলা-ইংরেজি ছাড়াও তিনটি ভাষা থাকবে।
স্থানীয় সময় সোমবার (৪ নভেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন পরিচালনাকারী সংস্থা বোর্ড অব ইলেকশন্সের নিউইয়র্ক শাখার নির্বাহী পরিচালক মাইকেল জে রায়ান এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন।
মাইকেল জে রায়ান বলেন, আমি নিজে ইংরেজি ভাষায় দক্ষ। তবে এখানে আমাদের কমিউনিটিতে এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা বাংলা ভাষার ব্যালট পেপার দেখলে স্বস্তি বোধ করবেন। ভোটকেন্দ্রে এটি তাদের জন্য সহায়ক হবে।