প্রধান শিক্ষকের সার্টিফিকেট জাল, বন্ধ হলো বেতন
লালমনিরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১৪:৫৯
ছবি : সংগৃহীত
লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার দেওডোবা তারকানাথ সরকার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হান্নানের বিরুদ্ধে জাল সার্টিফিকেটে নিয়োগ পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওই প্রধান শিক্ষকের বেতন বন্ধ করা হয়েছে। এ ঘটনায় উপজেলা মৎস কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এদিকে, জাল সার্টিফিকেটে হওয়া নিয়োগ বাতিল, রাতের আঁধারে গঠিত ম্যানেজিং কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠনসহ বিদ্যালয়ের নানা অনিয়ম অভিযোগ করেছেন ওই বিদ্যালয়ের অভিভাবক ও এলাকাবাসী।
এ নিয়ে শনিবার (১৬ নভেম্বর) আদিতমারী উপজেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রধান শিক্ষক প্রতাপ চন্দ্র।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯০ সালে ওই বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে যোগ দেন আব্দুল হান্নান। তখন তার সার্টিফিকেট ছিল এসএসসি দ্বিতীয়, এইচএসসি তৃতীয় এবং স্নাতক তৃতীয় বিভাগ। কিন্তু দীর্ঘ ৩৩ বছর সহকারী শিক্ষক পদে চাকরি করে স্বপ্ন জাগে প্রধান শিক্ষক হওয়ার। ২০২৪ সালে এসে তিনি এইচএসসি ও স্নাতক দ্বিতীয় বিভাগ জাল সার্টিফিকেট তৈরি করে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ নেন। এ জন্য তিনি গোপনে ম্যানেজিং কমিটি গঠন করে মাজেদুল ইসলাম নামে এক সহকারী শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বানিয়ে নিজে প্রধান শিক্ষক পদ বাগিয়ে নেন। এ ছাড়া তিনি প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসেই আয়া, পরিচ্ছন্ন কর্মী, অফিস সহকারী ও নিরাপত্তা কর্মী পদে চারজনকে মোটা অংকের টাকা উৎকোচ নেন। পরে নিজ বাড়িতে পরীক্ষা নিয়ে নিয়োগ দেন। এছাড়া স্কুল ফান্ডে থাকা এক লাখ ৮৬ হাজার টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন।
অভিযোগ উঠেছে, ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি হান্নান মিয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও শিক্ষক মাজেদুল ইসলাম এবং উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জাকির হোসেনের যোগসাজশে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামানকে একাধিকবার বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচিত করেন। তিনি সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে বিদ্যালয়ে শুরু করেন নানা অনিয়ম।
এক যুগ বিদ্যালয়ে নৈশপ্রহরী পদে স্বেচ্ছায় শ্রম দেওয়া সুমন মিয়া নামে এক ভুক্তভোগী গত ৭ জুলাই অভিযুক্ত শিক্ষক আব্দুল হান্নানের নামে স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও জাল সার্টিফিকেটে প্রধান শিক্ষক হওয়ার ব্যাপারে আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। পরে অভিযোগ আমলে নিয়ে ইউএনও নূর-ই-আলম সিদ্দিকী উপজেলা মৎস কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের অভিযুক্ত শিক্ষক আব্দুল হান্নানসহ সদ্য নিয়োপ্রাপ্ত চার কর্মচারীর বেতন বন্ধ রেখেছেন।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অধিকতর তদন্তের কথা বলে ৩ মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো পদক্ষেপ নেননি বলে অভিযোগ করেন বিদ্যালয়ের অভিভাবকরা।
তবে এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর-ই-আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘দেওডোবা তারকানাথ সরকার উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল হান্নানের বিরুদ্ধে অভিযোগের ব্যাপারে গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দিয়েছেন। বিদ্যালয়ের ওই শিক্ষকসহ সদ্য নিয়োপ্রাপ্ত আরও ৪ কর্মচারীর বেতন বন্ধ রয়েছে। বিষয়টির অধিকতর তদন্ত করতে সময় লাগছে। অপরাধ প্রমাণিত হলে বিধিমতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শিক্ষক আব্দুল হান্নানকে বিদ্যালয়ে গিয়ে পাওয়া যায়নি। তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি।
এসকেএস/এমজে