সিলেটের মুনতাহা আক্তার জেরিন। প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর ৫ বছরের ফুটফুটে মেয়েটি ছিল পরিবারের সবার আদরের। বাবা-মায়ের কলিজার ধন। প্রায় সময়ই বাবার সঙ্গে বাইরে যাওয়ার বায়না ধরতো। সর্বশেষ বাবার সঙ্গে স্থানীয় একটি ওয়াজ মাহফিলে গিয়েছিল। পরদিন সকালে বাড়িরে পাশেই খেলছিল অন্য শিশুদের সঙ্গে। কিন্তু বিকেলে পেরিয়ে সন্ধ্যা গড়ালেও ঘরে ফিরেনি মুনতাহা।
চারিদিকে শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। কোথাও নেই। একপর্যায়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন বাবা। পুলিশও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাধ্যমে ভাইরাল হয় নিখোঁজের ঘটনা। স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে স্থান পায় এই সংবাদ। দেশের নামকরা তারকারাও ফেসবুকে মুনতাহাকে নিয়ে পোস্ট দেন। সবার আশা ছিল মুনতাহা ফিরবে। মুনতাহা ফিরেছেও! কিন্তু সবাইকে কাঁদিয়ে নিথর দেহ নিয়ে।
রোববার (১০ নভেম্বর) ভোর ৪টার দিকে মুনতাহার নিজ বাড়ির একটি ডোবায় নিথর দেহের সন্ধান পাওয়া যায়। এ খবর দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে সবজায়গায়। তার মৃত্যুর খবরে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন দেশের মানুষ। কাঁদছেন সবাই।
মুনতাহা সিলেট জেলার কানাইঘাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের বীরদলের ভাড়ারিফৌদ গ্রামের শামীম আহমদের মেয়ে।
কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল আওয়াল জানান, ভোর ৪টার দিকে মুনতাহার লাশ তার বাড়ির পাশের একটি ডোবা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তার গলায় রশি প্যাঁচানো ও শরীরে ক্ষত চিহ্ন পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে তাকে হত্যা করে পুকুরে ফেলে দেয়া হয়েছে।
স্থানীয়দের বরাতে জানা গেছে, মুনতাহাকে হত্যা করে গুম করে রাখা হয়েছিল বাড়ির পাশেই। রোববার ভোরে তার লাশ বাড়ির পাশের একটি পুকুরে ফেলার সময় স্থানীয়দের চোখে পড়ে। এ সময় এক নারীকে আটক করে স্থানীয় জনতা। পরে আরও একজন এবং আগে একজনকে আটক করা হয়। তারা হলেন- বীরদল গ্রামের মারজিয়া, তার মা আলিফ জান ও নানি কুতুবজান।
কানাইঘাটের সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আফসার উদ্দিন আহমদ চৌধুরী বলেন, স্থানীয় একটি অনলাইন পত্রিকার প্রতিনিধিরা নিখোঁজ মুনতাহার সন্ধানে তাদের বাড়িতে গিয়ে লাইভ করে। তখন বাড়ির সবাইকে মুনতাহার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে। এ সময় পাশের ঘরের মারজিয়া নামে এক নারী একবার একেক রকম কথা বলতে থাকে। মারজিয়া মুনতাহাকে পড়াত। দিনের একটা বড় সময় মারজিয়া তার সঙ্গেই থাকত।
ইউপি চেয়ারম্যান আরও বলেন, উল্টাপাল্টা কথা বলার কথা শুনে সন্দেহ হলে সন্ধ্যায় কানাইঘাট থানা-পুলিশ মারজিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসে। আর ওই রাতেই তার মা মুনতাহার মরদেহ ডোবা থেকে পুকুরে নিয়ে ফেলার সময় স্থানীয় একজন দেখে ফেললে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। এ সময় অপর একজন তাকে ধরে ফেলেন। পরে পুলিশ গিয়ে ওই নারী ও তার মাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ওসমানী হাসপাতালে পাঠায়।
কানাইঘাট থানার ওসি মো. আব্দুল আওয়াল বলেন, ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
ওএফ