বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণকেন্দ্রে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকেঝাঁকে রূপালি ইলিশ। ছবি : সংগৃহীত
ইলিশ প্রজনন ও সংরক্ষণে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় জেলেরা সাগরে মাছ শিকারে যাচ্ছেন। জেলেদের জালে অন্যান্য মাছসহ ঝাঁকেঝাঁকে রূপালি ইলিশ ধরা পড়ছে। মাছ বিক্রির হাঁকডাকে আবারও সরগরম হয়ে উঠছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বরগুনার পাথরঘাটা বিএফডিসি মৎস্য অবতরণকেন্দ্রে। প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে কোটি টাকার বেশি মাছ।
স্থানীয় জেলেরা জানান, নিষেধাজ্ঞার পরপরই সাগরে ইলিশ ধরা পড়ায় দারুণ খুশি তারা। একের পর এক মাছের ট্রলার ভিড়ছে ঘাটে। আড়ৎ থেকে খুচরা বাজার কিংবা টুকরিতে করে পাড়া-মহল্লায় যে মাছ বিক্রি হচ্ছে তাতে দামের পার্থক্য কেজি প্রতি ৩ শ টাকা বা তারও বেশি। তাই এখন পর্যন্ত ইলিশের স্বাদ গ্রহণ করা সাধারণ মানুষের সাধ্যের বাইরে রয়েছে।
এফবি বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি আ. রহমান জানান, সাগর থেকে এসেছি ট্রলার বোঝাই ইলিশ নিয়ে। সরকারের বিভিন্ন সময়ের নিষেধাজ্ঞা মানার কারণে এতো ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। ইলিশের সাইজও তুলনামূলক ভালো। বড় আকৃতির ইলিশ ধরা পড়ায় ভালো দাম পাচ্ছি।
মৎস্য আড়তদার সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর জোমাদ্দার বলেন, মৌসুমের শেষে ট্রলার থেকে ঝাঁপি বোঝাই করে ইলিশ অবতরণ কেন্দ্রে নামছে দেখে স্বস্তি ফিরেছে মৎস্য ব্যবসায়ীদের। সরকারের দেয়া নিষেধাজ্ঞার সুফল পাবেন জেলে, মৎস্যজীবি, ব্যবসায়ীসহ সবাই। ভালো মাছের সরবরাহের পাশাপাশি চাহিদাও রয়েছে প্রচুর। সরাসরি ঘাট থেকে পদ্মা সেতু হয়ে বিভিন্ন পরিবহনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যাচ্ছে মাছ।
মৎস্য ব্যবসায়ী রফিক হোসেন ও শুক্কুর মিয়া জানান, ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায় ইলিশের চাহিদা রয়েছে। পাইকারি দরেও এক কেজির বেশি ওজনের ১৭শ ৫০ এবং এক কেজি সাইজের ইলিশ ১৫ শ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। স্থানীয় বাজারে দাম অবিশ্বাস্য রকমের চড়া।
বরগুনা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানিয়েছেন, ‘আমরা কষ্ট করে নিষেধাজ্ঞা পালন করে এবং সুফল ভোগ করি সবাই মিলে। গত ৪ দিনে সমুদ্র থেকে আসা ট্রলারে প্রচুর ইলিশ ও অন্যান্য মাছ ছিল। সমুদ্রে এরকম ইলিশসহ অন্যান্য মাছ পেলে বিগত দিনের সব ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলে আমি মনে করি।
জেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা হাসিবুল হক জানান, জেলেরা নিষেধাজ্ঞা মেনেছেন। সরকারের বরাদ্দ অনুযায়ী প্রত্যেক জেলেকে ২৫ কেজি করে ভিজিএফের চাল সহায়তা দেয়া হয়েছে।
বরগুনা পাথরঘাটা বিএফডিসি মৎস্য অবতরণকেন্দ্রের সহকারী বিপনন কর্মকর্তা মোহাম্মদ রিপন হোসেন জানান, সমুদ্রের মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়াতে বেডেছে রাজস্ব আদায়। এ অবতরণকেন্দ্রে বিক্রিত মাছের দামের শতকরা ১.২৫ শতাংশ রাজস্ব পায় সরকার। গতকাল বুধবার একদিনে বিএফডিসিতে ৫ দশমিক ১ মেট্রিকটন ইলিশ বিক্রি হয়েছে।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মহসীন বলেন, ভরা মৌসুমে আরও বেশি পরিমান ইলিশ মাছ পাওয়া যাবে। তবে বর্তমানে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় স্থানীয় বাজারে ইলিশের দাম বেশি।