কর্মবিরতিতে শ্রমিকরা : বিপর্যয়ের মুখে সিলেটের ১২ চা-বাগান
সিলেট ব্যুরো
প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ১৯:৩০
ছবি : বাংলাদেশের খবর
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ন্যাশনাল টি-কোম্পানির আওতাভুক্ত সিলেট বিভাগের ১২টি বাগানের শ্রমিকরা ১৬ দিন ধরে কর্মবিরতি পালন করছেন। ৮ সপ্তাহের বেতন-ভাতা ও ১৭ মাসের প্রফিডেন্ট ফান্ডের টাকা না পেয়ে এই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। আজও (৬নভেম্বর) কাজে ফিরেননি কোম্পানিটির আওতাভুক্ত সিলেট জেলার লাক্কাতুরা, কেওয়াচড়াসহ দলদলি চা-বাগানের শ্রমিকরা। এ অবস্থায় অনেকটা বির্যয়ের মুখে পড়ছে চা-শিল্প। লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হতে পারে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, লাক্কাতুরা, কেওয়াচড়া, দলদলি চা-বাগানের শ্রমিকরা ১৬ দিন ধরে কর্মবিরতি পালনের পাশাপাশি বিক্ষোভ করছেন। গত মঙ্গলবার ( ৫নভেম্বর) সিলেট এয়ারপোর্ট রোডে মিছিলও করেছেন তারা। মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে লাক্কাতুরা ন্যাশনাল টি-কোম্পানির ফটকে এসে শেষ হয়।
লাক্কাতুরা চা-বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির কোষাধ্যক্ষ বিপন গোয়ালা বাংলাদেশের খবরকে জানান, ন্যাশনাল টি-কোম্পানির আওতাভুক্ত সিলেট জেলার লাক্কাতুরা, কেওয়াচড়া, দলদলি চা-বাগানে মোট ১ হাজার ১৮০ জন শ্রমিক রয়েছেন। কিন্তু ৮ সপ্তাহ ধরে আমাদের বেতন-ভাতা বকেয়া পড়ে আছে। আটকে আছে ১৭ মাসের প্রফিডেন্ট ফান্ডের টাকাও। এ অবস্থায় দফায় দফায় কর্তৃপক্ষের কাছে ধর্না দিলেও তারা সন্তোষজনক জবাব দিচ্ছেন না। তাই বাধ্য হয়ে আমরা কর্মবিরতি পালন করছি। গত কয়েকদিন বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছি। তবে আজ (বুধবার) শুধু কর্মবিরতিতে আছি। বেতন-ভাতা না পেয়ে আমরা মানবেতর দিনযাপন করছি।
চা-শ্রমিকরা বলেন, আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে বেতন-ভাতা দাবি করলে অর্থসঙ্কটে ভোগছেন বলে জানান। তারা কৃষি ব্যাংকের কাছে ঋণ দেওয়ার আবেদন করেছেন। ঋণ পেলে আমাদের টাকা পরিশোধ করবেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রতি মাসে ঠিকই পাচ্ছেন বেতন । তবে আমাদের ক্ষেত্রে এই বৈষম্য কেন?
বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সিলেট ভ্যালির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রাজু গোয়ালা বাংলাদেশের খবরকে বলেন, দরিদ্র চা-শ্রমিকদের টানা ৮ সপ্তাহের বেতন-ভাতা বকেয়া পড়ে থাকলেও ন্যাশনাল কোম্পানিকর্তৃপক্ষের টনক নড়ছে না। বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে তারা আজ (বুধবার) বিকেল ৪টার মধ্যে যোগাযোগ করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কেউ যোগাযোগ করেননি। এ অবস্থায় বিভাগের ১২টি চা-বাগানের অচলাবস্থা সহসাই কাটবে বলে মনে হচ্ছে না।
‘এ বিষয়ে দু’দিন আগে সিলেট জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বৈঠক করেও কোনো সমাধান হয়নি’ ,যোগ করেন তিনি।
এদিকে এ বিষয়ে জানতে ন্যাশনাল টি-কোম্পানির সিলেট রিজিওনের ব্যবস্থাপক এমদাদ হোসেনের সঙ্গে আলাপ করলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি বক্তব্য দিতে পারব না। পরে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
অন্যদিকে, চা-শ্রমিকদের আন্দোলনে সংহতি ও একাত্মতা পোষণ করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা। স্বল্পমজুরির চা-শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-ভাতা এবং প্রফিডেন্ট ফান্ডের টাকা দ্রুত পরিশোধের দাবি জানিয়েছেন তারা।
গত মঙ্গলবার শ্রমিকদের এক সভায় অংশগ্রহণ করে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী বলেন, চা-শ্রমিকরা এ সমাজেরই অংশ। কিন্তু তারা দিনের পর দিন ধরে অবহেলিত। তাদের যৌক্তিক দাবিগুলো দ্রুত পূরণ করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
এটিআর