সিলেটে স্বামী হত্যার দায়ে স্ত্রীসহ ৩ জনের ফাঁসির আদেশ

বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৪:০৬

সিলেটের জাফলংয়ে পরকীয়া প্রেমিককে সঙ্গে নিয়ে স্বামীকে খুনের দায়ে ওই নারী, তার প্রেমিক ও আরেকজনকে ফাঁসির দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (৪র্থ) আদালতের বিজ্ঞ বিচারক শায়লা শারমিন এ রায় প্রধান করেছেন।
রায়ের বিষয়টি বাংলাদেশের খবরকে নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (৪র্থ) আদালতের পিপি জালাল উদ্দিন।
ফাঁসির সাজাপ্রাপ্তরা হলেন- খুন হওয়া যুবকের স্ত্রী খুশনাহার (২২), মাহমুদুল হাসান মাহিন (২৫) ও নাদিম আহমদ নাইম (২০)।
গত বছরের ১৭ এপ্রিল সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং বল্লাঘাট রিভারভিউ রিসোর্টের পাশে অজ্ঞাতনামা এক যুবকের লাশ পাথরচাপা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ এসে লাশটি উদ্ধার করে। পরবর্তীতে জানা যায়, নিহত যুবকের নাম আলে ইমরান (৩২)। তিনি কিশোরগঞ্জের নিকলী থানার গুরই গ্রামের আব্দুল জব্বারের ছেলে।
পরে নিহতের বাবা গোয়াইনঘাট থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ পৃথক অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তদের কিশোরগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানায়, খুশনাহার খুন হওয়া ইমরানের স্ত্রী ছিলেন এবং নাদিম খুশনাহারের পরকীয়া প্রেমিকের বন্ধু। নাদিম নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জ থানার বেলদি গাজীরটেক গ্রামের মো. জিন্নাতের ছেলে। আর খুশনাহার কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী থানার ছেত্রা গ্রামের মৃত আব্দুস ছাত্তারের মেয়ে। ঘটনার পর নাদিমকে নিজ বাড়ি, খুশনাহারকে ঢাকার বসুন্ধরা ও কিশোরগঞ্জ থেকে খুশনাহারের প্রেমিক মাহিদুল হাসান মাহিন ও নারায়ণগঞ্জ থেকে রাকিব নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ওই সময় পুলিশ জানতে পারে, ইমরানের স্ত্রী খুশনাহারের সঙ্গে মাহিদুল হাসান মাহিনের দীর্ঘদিনের অবৈধ প্রেম চলছিল। মাহিন ঢাকার একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে জিএম পদে কর্মরত ছিলেন। ইমরানের সঙ্গে ঘটনার পাচঁ বছর আগে খুশনাহারের বিয়ে হয়। মাহিনের সাথে প্রেমে জড়ানোর পর থেকেই খুশনাহার এবং তার প্রেমিক মাহিন বিভিন্ন সময় ইমরানকে হত্যা করার চেষ্টা করছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় হত্যার উদ্দেশে খুশনাহার বেড়ানোর কথা বলে স্বামীকে নিয়ে গত বছরের ১৫ এপ্রিল রাতে ভৈরব হতে ট্রেনযোগে সিলেটের উদ্দেশ্য রওয়ানা হন।
অন্যদিকে, একই দিনে প্রেমিক মাহিন ও মাহিনের অফিসে কর্মরত নাদিম এবং রাকিব নামের এক সহযোগী ঢাকা কমলাপুর হতে ট্রেনযোগে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। ১৬ এপ্রিল সকাল ৮টার দিকে জাফলং বল্লাঘাটের রিভারভিউ রিসোর্ট অ্যান্ড আবাসিক হোটেলর ১০১নং কক্ষে স্ত্রীকে নিয়ে উঠেন ইমরান। এ সময় অন্য তিন আসামি জাফলং বল্লাঘাটের হোটেল শাহ আমিনে অবস্থান করেন।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যার আগে খুশনাহার কৌশলে ‘রিভারভিউ রিসোর্ট অ্যান্ড আবাসিক হোটেল’র তাদের কক্ষের সামনের সিসিটিভি ক্যামেরা অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেন। পরবর্তীতে মাথাব্যথার ওষুধের কথা বলে রাত ১০টার দিকে ইমরানকে তার স্ত্রী খুশনাহার ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দেন। কিছুক্ষণ পর ইমরান গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলে স্ত্রী খুশনাহার রাত ১২টার দিকে তার প্রেমিক মাহিন ও সহযোগীদের হোটেল কক্ষে নিয়ে আসেন। রাত ২টার দিকে ইমরানের গলায় গামছা পেঁচিয়ে খুশনাহার ও তার প্রেমিক মাহিন হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেন।
এ সময় আসামি নাদিম পর্যটক ইমরানের পা চেপে ধরেন এবং রাকিব নামের একজন রুমের বাইরে পাহারা দেন। ইমরানের মৃত্যু নিশ্চিত হলে রাত ৩টার দিকে ইমরানের মরদেহ লুকিয়ে রাখার জন্য হোটেলের পাশে পাথরচাপা দিয়ে রাখেন। পরে রাত সাড়ে ৪টার দিকে তারা হোটেল থেকে বের হয়ে সিএনজিচালিতে অটোরিকশাযোগে সিলেট ছেড়ে পালিয়ে যান।
ঘটনার ২০ মাস পর মামলার নির্ধারিত প্রক্রিয়া শেষে খুশনাহার, মাহমুদুল হাসান মাহিন ও নাদিম আহমদ নাইমকে ফাঁসির আদেশ দেন আদালত। অন্যদিকে, গ্রেপ্তার রাকিবকে আদালত খালাস দিয়েছেন।
ওএফ