চাঁদপুর নৌ বন্দরের নির্মাণকাজে ধীরগতি, বাড়ছে দুর্ভোগ

চাঁদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২১:১৯
-67473880c3ff7.jpg)
ছবি : বাংলাদেশের খবর
চাঁদপুর-ঢাকা নৌ রুট এই অঞ্চলের মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত বিলাসবহুল লঞ্চে আরামদায়ক ভ্রমণের কারণে যাত্রী সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে সরকার চাঁদপুরে আধুনিক নৌ বন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। তবে, এক বছর ৪ মাস আগে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের নির্মাণ কাজ চলছে ধীরগতিতে। ফলে যাত্রীদের দুর্ভোগ দিন দিন বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নানা জটিলতায় নির্মাণ কাজ কিছুটা পিছিয়ে পড়লেও দ্রুত সময়ে এটি সম্পন্ন করার চেষ্টা চলছে।
চাঁদপুর শহরের মাদ্রাসা রোড এলাকায় মেঘনা নদীর পাড়ে আধুনিক নৌ বন্দর নির্মাণের তোড়জোর চলছে। ১ হাজার ৫০০ স্কয়ার মিটার জায়গায় নির্মিত হবে ৪ তলা বিশিষ্ট তিনটি ভবন, পন্টুন, গ্যাংওয়ে, পার্কিং ইয়ার্ড এবং এক্সটার্নাল ব্রিজ। পাশাপাশি, বন্দরে যাতায়াতের রাস্তা প্রশস্তকরণের কাজও চলছে। ভবন নির্মাণের জন্য ৩১০টি পাইলিং কাজ করতে হবে, যার মধ্যে ১৫০টি পাইলিং আংশিক এবং ৮৬টি পাইলিং সম্পন্ন হয়েছে। তবে, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হতে এখনও এক বছর বেশি বাকি থাকলেও কাজের অগ্রগতি খুবই ধীর।
২০২৩ সালের আগস্টে শুরু হওয়া প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৫ সালের মে মাসে। তবে এখনো প্রকল্পের ৮০ শতাংশ কাজ বাকি রয়েছে। একনেক সভায় ২০১৬ সালে এই প্রকল্পটি অনুমোদন পায় এবং এর মাধ্যমে চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, শরীয়তপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার হাজারো যাত্রীর জন্য আধুনিক সেবা নিশ্চিত করার আশা করা হয়েছিল।
বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ২.২ একর জমিতে নির্মিত এই আধুনিক নৌ-বন্দর প্রকল্পের ব্যয় প্রথমে ৬৭ কোটি টাকা ধরা হলেও বর্তমানে তা বেড়ে ৯৩ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। প্রকল্পের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন।
লঞ্চ যাত্রী মামুন মাল বলেন, ‘আধুনিক নৌ টার্মিনালের কাজ শুরু হয়েছে প্রায় দেড় বছর আগে। এখনো কোনো দৃশ্যমান কাজ দেখা যায়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অবহেলায় নির্মাণ কাজ ধীরগতিতে চলছে, যার কারণে আমাদের ভোগান্তি বেড়ে যাচ্ছে।’
ফরিদগঞ্জ আসা ঢাকাগামী যাত্রী গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘অস্থায়ী নৌ টার্মিনালে নেই কোনো বসার স্থান, টয়লেট কিংবা যাত্রী ছাউনি। পরিবার নিয়ে যাতায়াতের সময় বিপাকে পড়তে হয়, বিশেষ করে অসুস্থ ও নারীদের জন্য এটি আরও কষ্টকর। আমরা আশা করেছিলাম, শিগগিরই এই কাজ শেষ হবে, কিন্তু সেই সম্ভাবনা এখন দেখা যাচ্ছে না।’
বিআইডব্লিউটিএ'র জেলা বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা মো. বছির আলী খান বলেন, ‘চাঁদপুর লঞ্চ ঘাট থেকে প্রতিদিন ছোট-বড় অর্ধশতাধিক লঞ্চ চলাচল করে। যাত্রী সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার, যা উৎসবের সময় কয়েক গুণ বাড়ে। তবে বন্দরের কাজ শেষ না হওয়ায় আমরা যাত্রীদের যথাযথ সেবা দিতে পারছি না।’
প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি। তবে বিআইডব্লিউটিএ-এর অতিরিক্ত চিফ ইঞ্জিনিয়ার ও প্রকল্প পরিচালক আইয়ুব আলী বলেন, ‘প্রকল্পের জন্য আমাদের ২৪ মাসের মেয়াদ ছিল। এখন পর্যন্ত প্রায় ১৬ মাস পার হলেও কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ১৬ শতাংশ। পাইলিং কাজের সময় মাটির নিচে ১০ মিটার পর্যন্ত বোল্ডার থাকার কারণে কাজের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তবে, আশা করি নভেম্বর মাসের মধ্যে পাইলিংয়ের কাজ শেষ হবে এবং আগামী আগস্টের মধ্যে ভবন নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হবে।’
আলআমিন ভূঁইয়া/এমএইচএস